প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: কে টিভি নিউজ: ২ মে:
মাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে কুচবিহার জেলার চন্দ্রচূড় সেন। তার প্রাপ্ত নং (৬৯৩)। তিনি রামভোলা হাইস্কুলের ছাত্র। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে পুরুলিয়া জেলা স্কুলের সাম্যপ্রিয় গুরু (৬৯২)। তৃতীয় হয়েছে ৩ জন, যথাক্রমে- দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে উদয়ন প্রাসাদ (বালুরঘাট হাই স্কুল), বীরভূম থেকে পুষ্পিতা বাসুলি (নিউ ইন্টিগ্রেটেড গভ: হাই স্কুল) এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে নৈঋত রঞ্জন পাল (নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন)।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৪ জন মেধা তালিকায় (প্রথম দশে) জায়গা করে নিয়েছে। ৪ জনই জেলা শহর মেদিনীপুরের বাসিন্দা। ২ জন আবার ‘ঐতিহাসিক’ মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই চার কৃতী ছাত্রছাত্রী হল যথাক্রমে- মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের কৌস্তভ সাহু (ষষ্ঠ স্থান-৬৮৮), মেদিনীপুর মিশন গার্লসের তনুকা পাল (অষ্টম স্থান-৬৮৬), মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ধৃতিমান পাল (নবম স্থান-৬৮৫) এবং মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের অগ্নিভ পাত্র (দশম স্থান-৬৮৪)। প্রত্যেকেই জেলা শহর মেদনীপুরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
ষষ্ঠ স্থানাধিকারী কৌস্তভের বাড়ি মেদিনীপুর শহরের ধর্মা সংলগ্ন আনন্দনগরে। বাবা সূর্যেন্দু বিকাশ সাহু এবং মা মৌসুমী মন্ডল সাহু দু’জনই পেশায় শিক্ষক। কৌস্তভ বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। অবসর সময়ে মনীষীদের জীবনী পড়ে, টিভি দেখে এবং ক্রিকেট খেলে। এদিন ফলাফল প্রকাশের পরেই তার বাড়িতে খুশির হাওয়া! কৌস্তভের বাবা-মা জানান, “ছেলে ভালো রেজাল্ট করবে আশা করেছিলাম। তবে, ষষ্ঠ স্থান অর্জন করবে, ভাবিনি! আমরা খুব খুশি। পরিবার, নিজের স্কুল ও জেলার মুখ উজ্জ্বল করতে পেরেছে ও।”
মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় (Madhyamik Results 2024) এবার জায়গা পেয়েছে ৫৭ জন ছাত্র-ছাত্রী। এর মধ্যে, অখন্ড মেদিনীপুরের ১২ জন। পূর্বের ৭ জন, পশ্চিমের ৪ জন এবং ঝাড়গ্রামের ১ জন জায়গা করে নিয়েছে মেধা তালিকায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের ৪ জনের মধ্যে একমাত্র ছাত্রী হিসেবে মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে মেদিনীপুর মিশন গার্লস হাইস্কুলের তনুকা পাল। জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার সাথে সাথেই তনুকা রাজ্য ব্যাপী মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করেছে। তনুকা-র প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৬। তনুকার বাড়ি মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরে। বাবা দেবব্রত পাল পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। মা নিবেদিতা পাল গৃহবধূ।
তনুকা-ও বাবার মতোই বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। এপ্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, মাধ্যমিকে ষষ্ঠ স্থানাধিকারী (জেলায় প্রথম) মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের কৌস্তভ সাহুও ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কৌস্তভ ও তনুকা দু’জনেরই বার্তা, “পাঠ্যপুস্তক (টেক্সট বুক) ভালোভাবে খুঁটিয়ে পড়তে হবে।” তনুকা পড়াশোনা ছাড়াও নাচ, গান এবং অঙ্কনেও পারদর্শী। তনুকা জানায়, মাত্র ৫-৬ ঘন্টা মন দিয়ে পড়াশোনা করলেই সাফল্য পাওয়া যায়। সে এও জানায়, “প্রতিটি বিষয়েই গৃহ শিক্ষক ছিলেন। স্কুলের আবদানও অনস্বীকার্য। তবে, আমি কখনোই খুব বেশি চাপ নিইনি। মন খুলে পড়াশোনা করেছি।” বিদ্যালয়ে প্রথম নয়, তনুকা তৃতীয় স্থান দখল করতো বরাবর। এমনকি টেস্ট পরীক্ষার ফলাফলেও তনুকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় স্থানই অর্জন করেছিল। তনুকা জানায়, “মাধ্যমিক পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছিল। ভালো রেজাল্ট হবে আশা করেছিলাম। তবে, এতটাও আশা করিনি!” তনুকা-র দিদি আছেন। তিনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য তনুকা-র বার্তা, “বেশি চাপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই! ভালোবেসে পড়াশোনা করলেই সাফল্য পাওয়া যাবে।”
উল্লেখ্য, ৮০ দিনের মাথায় এবার প্রকাশিত হল মাধ্যমিকের ফলাফল। এবার পাশের হার সামান্য বেড়ে হয়েছে ৮৬.৩১ (গত বছর ছিল ৮৬.১৫) শতাংশ। পাশের হারে প্রথম স্থান অধিকার করেছে কালিম্পং জেলা। এই জেলায় পাশের হার ৯৬ শতাংশের বেশি। এরপর, যথাক্রমে- পূর্ব মেদিনীপুর (৯৪), কলকাতা (৯২) ও পশ্চিম মেদিনীপুর (৯১.৪ শতাংশ)। মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ৫৭ জন। মেধাতালিকায় সর্বাধিক ৮ জন আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে। দক্ষিণ দিনাজপুর, পূর্ব বর্ধমান এবং পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ৭ জন করে মেধাতালিকায় জায়গা পেয়েছে। বীরভূম, মালদা ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ৪ জন করে মেধাতালিকায় জায়গা পেয়েছে। মেধাতালিকায় পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি জেলা থেকে একজন করে আছে।