প্রতিনিধি : ঘাটাল : কে টিভি নিউজ : ২৫ মে : প্রতিবাদ প্রতিরোধ, বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ, আগুনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন। সকাল থেকে ঘাটাল লোকসভার কয়েকটি বুথে ইভিএম এর সমস্যা হওয়ায় ভোট প্রক্রিয়া শুরু হতে বিলম্ব হয়। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটের পরিবেশ ক্রমশই উত্তপ্ত হতে শুরু করে। অন্যদিকে ভোটের দিন দুই প্রার্থী ভোটদান পর্ব দেখতে সকাল থেকেই ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন বুথে বুথে। একদিকে ঘাটাল, দাসপুর, পিংলা, সবং, কেশপুর বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন বুথ পরিদর্শন করেন তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী (দেব) তখন অন্যদিকে কেশপুর বিধানসভা এলাকায় ঢুকেই বিভিন্ন জায়গায় এলাকার মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বিজেপি প্রার্থী হিরন্ময় চ্যাটার্জী।
ঘাটাল লোকসভার আনন্দপুরে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন হিরন। কেশপুরের গাডরা এলাকায় বিজেপি প্রার্থী হিরনের সঙ্গে পুলিশের গন্ডগোল হয় অল্পবিস্তর। হিরনের অভিযোগ, তাকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিক থেকে জওয়ানরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। কোথাও স্বাভাবিকভাবে ভোট হতে দিচ্ছে না। কেশপুরের আনন্দপুর থানার খেড়িয়াবালি এলাকায় বিজেপি প্রার্থী হিরন্ময় চ্যাটার্জীর গাড়ি আটকে বাঁশ লাঠি হাতে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মী সমর্থক সহ গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিজেপি প্রার্থী হিরন এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, গতকাল রাতে হিরন এলাকায় বিজেপি কর্মীদের পাঠিয়ে গ্রামবাসীদের উপর হামলা করিয়েছে। তাই এলাকায় হিরনকে ঢুকতে দেওয়া হবেনা। হিরনের দাবি, বিভিন্ন বুথে অবাধ ছাপ্পা, ভোটারদের ভয় দেখানো, ভোট দিতে বাধাদান করছে তৃণমূল কর্মীরা, তাই তাকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রায় ঘন্টা খানেক গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ আটকে থাকে হিরনের কনভয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা রয়েছে এলাকায়। প্রায় ঘন্টা খানেক আটকে থাকার পর তাঁকে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্যত্র যেতে হয় হিরনকে।
সেখান থেকে বেরিয়ে কেশপুর থেকে নেড়াদেউলের দিকে যাওয়ার পথে ৫ নং অঞ্চলের মুগবসানের কাছে রাস্তায় হিরনের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখায় শতাধিক এলাকাবাসী। তবে সেখানে উপস্থিত ছিলনা রাজ্য পুলিশ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে এলাকাবাসীদের সরানোর চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কেশপুর থানার পুলিশ। ততক্ষনে এলাকাবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি এতটাই হয় যে তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে গো ব্যাক শ্লোগান দিতে শুরু করে। সেখানেও প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট আটকে থাকার পর সেখান থেকেও বাধ্য হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্যত্র যেতে হয় হিরনকে।
যদিও বিকেলে আনন্দপুরের কয়েকটি বুথে যান হিরন। এদিন ভোট গ্রহনের শেষপর্বে হিরন জানান, কেশপুরে ভোট হয়নি, ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। কেশপুরে ভোট হয়নি, পাগলু ড্যান্স হয়েছে।
অন্যদিকে ভোটের দিন সকাল থেকে বিভিন্ন বুথ পরিদর্শন থেকে শুরু করে তার ফ্যানদের সঙ্গে সেলফি তোলা, অটোগ্রাফ দেওয়া, কখনও আবার সাইকেল চালাতেও দেখা যায় দেবকে। ভোট গ্রহণ শেষে কেশপুরে যান দেব। তবে ভোট গ্রহন নিয়ে খুশি ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী দেব। তিনি বলেন, দুয়েকটা ছোটখাটো গন্ডগোলের ঘটনা ছাড়া সব মিলিয়ে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি প্রথম থেকেই বিরোধীদের কটাক্ষপূর্ণ বিভিন্ন বক্তব্যের পরেও আক্রমনাত্মক হননি, কারন তিনি চেয়েছিলেন ভোটটা শান্তিপূর্ণ হোক। তবে মার্জিন নিয়ে দেব বলেন, একটি ভোটে জেতা আর লক্ষ ভোটে জেতাটা বড় কথা নয়, তবে এবারও মানুষের রায় তৃণমুলের পক্ষেই থাকবে বলে আশাবাদী তিনি।
এবার আসুন দেখে নেওয়া ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনের বিস্তারিত কিছু তথ্য!
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র:
মোট ভোটার – ১৯ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৪৫ জন।
পুরুষ – ৯ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৪০ জন।
মহিলা – ৯ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৮৮ জন।
তৃতীয় লিঙ্গ – ১৭ জন।
মোট ভোট গ্রহন কেন্দ্র – ২০৯৫ টি।
মোট প্রার্থী – ৭ জন।
মোট ভোট পোলিং – ৮২.১৭ শতাংশ।