কে টিভি প্রতিবেদন: সন্তান তো সন্তানই। নিজেরা জন্ম দিই বা অন্য কেউ। আসল কথা হল তাদের লালন-পালন করা। বড় করে তোলা। সেটাই আমি ও আমার স্ত্রী মনেপ্রাণে করতে চেয়েছি। ওদের মানুষের মতো মানুষ করতে চাই!” জেলা শহর মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনের (সরকারি হোমের) দুই শিশুকন্যা-কে ‘দত্তক’ (Adopt) নিয়ে বেলজিয়াম পাড়ি দেওয়ার আগে মেদিনীপুর শহরের জেলাশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি এভাবেই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন আদিল মাসুদ এবং তাঁর স্ত্রী রেহালা বানু। আদতে উত্তর প্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে থাকেন আদিল ও রেহালা। প্রায় ১০ বছর বিয়ে হয়েছে আদিল ও রেহালা’র। দু’জনই ব্রাসেলসের নামকরা দুই সংস্থায় কর্মরত। বছর ৩৯-র আদিল একটি সংস্থার প্রজেক্ট ডাইরেক্টর এবং বছর ৩৭-র রেহালা অন্য একটি সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার। অনলাইনে সমস্ত পদ্ধতি মেনে গত ৬ বছর আগেই তাঁরা সন্তান দত্তক নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তবে, বেলজিয়ামে দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হওয়ায় এত দীর্ঘ সময় লাগল বলে দাবি তাঁদের। পদ্ধতি মেনেই এ দেশের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর শহরে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনের শিশুকন্যাদের দত্তক নেওয়ার সুযোগ আসে বলে জানিয়েছেন আদিল ও রেহালা। আদিল বলেন, “বেলজিয়ামে ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদ করা হয় না। তাই আমাদের আবেদনপত্রেও ছেলে বা মেয়ে উল্লেখ করার সুযোগ ছিল না। তবে, মনেপ্রাণে আমরা কন্যাসন্তানই দত্তক নিতে চেয়েছিলাম। বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনের মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন-পূরণ হলো!” রেহালা জানান, “আমরা সন্তান লালন-পালন বা মানুষ করতে চেয়েছি। সেটা যে নিজের গর্ভেরই হতে হবে, এমনটা আমরা ভাবিনি। বরং আমরা দত্তক নিয়েই তাকে বড় করার অঙ্গীকার করেছিলাম।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে সরকারিভাবে অনাথ ও অসহায় শিশুদের লালন-পালন করা হয়। পরবর্তী সময়ে, সমস্ত আইনি পদ্ধতি মেনে সেখান থেকে শিশুদের দত্তক নিতে পারেন দেশ-বিদেশের দম্পতিরা। কিছুদিন আগেই এক শিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন ইতালির এক দম্পতি। সবমিলিয়ে বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনের প্রায় ৪৫ জন শিশুকে এখনও পর্যন্ত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দম্পতি দত্তক নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক কেম্পা হোন্নাইয়া।